"ভ্রমণের এই দিনে, ঘুরতে নেই মানা, জেনে নিলাম সব, যা ছিল অজানা"।
"ভ্রমণের এই দিনে, ঘুরতে নেই মানা,
জেনে নিলাম সব, যা ছিল অজানা"।
তারিখঃ- ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ইং।
জেনে নিলাম সব, যা ছিল অজানা"।
লবীব আহমেদ
ভ্রমণ বরাবরই আনন্দের। আর সেটা যদি হয় বন্ধু-বান্ধব-শিক্ষকসহ সবাই মিলে, তাহলে তো আর আনন্দের শেষ নেই। ঠিক তেমনি এক আনন্দের সফর করে এলাম কলেজ থেকে গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি।
কলেজ থেকে স্যাররা প্রথমে ভেবেছিলেন সাদা পাথরে যাবেন। কিন্তু, আমাদের ইচ্ছে হচ্ছে মাধবকুণ্ড যাবো। স্যাররা তো আর না করতে পারেন না আমাদের ইচ্ছেটা। খরচ বেশি হবে বলে অধ্যক্ষ মহোদয় বলে দিলেন যে, অন্তত ৭০জন শিক্ষার্থী ৫০০টাকা করে দিতে হবে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে,নয়তো যাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যেই দিয়ে দিলাম ১০০জনের অধিক। যার কারণে মাধবকুণ্ড যাওয়া চুড়ান্ত । স্যার তারিখ ও ঘোষণা করলেন, ২৪ শে ফেব্রুয়ারি-২০২০ আহ! কি আনন্দ..!
২৪তারিখ যেন আসতেই চাইতেছে না। সফরে যাওয়ার আগেরদিন স্যার বললেন, সকাল ৭টা ৩০মিনিটের মধ্যেই কলেজে চলে আসতে হবে। রাত যেন কাটতে চাইতেছে না,ভোর ৫টায় ঘুম ভেঙে যায়। শুরু করি বন্ধুদের ফোন দেওয়া কিন্তু কি, একটা হারামীও কল ধরতে দেরি করে নাই। সবাই এতো ভোরে বেলায় উঠে গেছে ঘুম থেকে। কয়েক জন মেয়ে বন্ধুকে ফোন দিলাম, তারা ও দেখি সজাগ। হায়! মোটামুটি সবাই সফরে যাওয়ার জন্য আমার মতোই পাগল। কিন্তু, সেটা সামনে কেহই স্বীকার করে না। যাইহোক ভোরে গোসল সেরে চা-বিস্কিট খেয়েই রওয়ানা দিলাম। এদিকে সকাল ৭ঃ৪০ হয়ে গেছে, কিন্তু আমিনের খাওয়া আর শেষ হচ্ছে না। সে বরাবরের মতোই অলস। তারপর গৌরীনগরের সবাই মিলেই গেলাম কলেজে৷ সবাই এসে মোটামুটি উপস্থিত। স্যার তারা ও চলে আসছেন। এবার কিন্তু, নতুন বরের মতো সেজে-গুজে কোর্ট পরে যাই। মেয়ে বন্ধু থেকে শুরু করে ছেলে বন্ধুরাও সুন্দর লাগছে বলে মজা নিচ্ছিলো আমার সাথে। ক্লাসে সবাইকে ডেকে স্যার সবার গাড়ি নাম্বার নির্দিষ্ট করে দিলেন। ১ম বাসে একাদশের ছেলে, ২য় বাসে মেয়েরা আর ৩য় বাসে আমরা দ্বাদশের ছেলে, ৪র্থটাতে মেয়েরা। আমাদের আগে থেকেই দাবী বশির স্যার আর দেলোয়ার মনির স্যারকে আমাদের বাসে চাই। কামাল স্যার আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী স্যারদের আমাদের বাসে দিয়ে দিলেন।
আমরা ও খুব খুশি হলাম।কেননা দুজন স্যারই ভালো গান গাইতে পারেন আমরা ও খুব ভালো উপভোগ করতে পারবো। তারপর সবাই যার যার মতো উঠে পড়লাম বাসে। আমাদের গাড়িতে ছোট একটা স্পিকার,যেটা দেখে সবারই মন খারাপ হয়ে যায়। হঠাৎ ইমরান এসে বললো যে, ২য় বাসে বড় স্পিকার। যেটা শুনে আর বাসে বসে থাকতে পারি নাই। চুরের মতো আমি আর আরেকজন নিয়ে আসলাম ঐ স্পিকার। অবশ্যই ইমরানকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলি নাই, জোরে হলো করতালি। আর সেখান থেকেই শুরু হলো আনন্দ বাস চললো, সাথে বেড়ে চললো আমাদের উল্লাস।
তারপরেই শুরু হলো গান আর নাচ৷ আহ! যে লবীব কখনো নাচ তো দূরের কথা, গান ও গায় নাই। সেই লবীব সেদিন গান ও গেয়েছে, সাথে নাচও,ভাবতেই অবাক..! সত্যিই আমার জীবনের অন্যতম একটি আনন্দপূর্ণ দিন। একজন গান গায়, তো সবাই সুর মিলিয়ে শুরু নাচ৷ আহ! কি মজা শিক্ষা সফর। স্যাররা ও আমাদের সাথে গান গেয়েছিলেন।
বশির স্যার আর দেলোয়ার স্যার আমাদের সাথে নাচলেও শাহীনুর স্যার সিটের কোণে তে বসেই আছেন, তবে স্যার গান একটা গেয়েছেন।
এভাবে চলতেই থাকলো গাড়ি আর আমাদের আনন্দ-ফুর্তি। নুরুল হক এমন একটা মানুষ, যে কিনা একটিবার ও বসে নাই। গান শুরু হলেই শুরু তার নাচ। আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে- ভিডিওকলের মাধ্যমে ৪ বাসের সবাই এক সাথে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওকল শুরু হলে আরো বেড়ে যায় সবার নাচের ধরণ,যেন এক প্রতিযোগিতা৷ হাহাহা..হাহাহা....
তারপর ধীরে ধীরে পৌছালাম মাধবকুণ্ড লেকে। সেখানে একটু হাঁটার পর শুরু হলো দুপুরের খাবার। স্বেচ্ছাসেবকরা সবার খাবার দিয়ে নিজেরাও খেতে বসলো। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, কয়েকটা বিরিয়ানির প্যাকেট মেয়েদের গাড়িতে তারা রেখে যায়। পরে সবাইকে দেওয়ার পর খাবারের সঙ্কট পড়ে যায়। যার কারণে পাগলা বন্ধু মহাতির আর কামাল স্যার মিলে একটা ভাগ করে খেয়ে নেন। যা ছাত্র-শিক্ষকের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
যাইহোক খাবারের শেষে শুরু হয় লটারির ড্র। আমি গতবছর লটারি জিততে পারি নাই বলে এবার মাত্র ২টা কিনেছি। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি! ১২৭০ জয়ী হয়, আর আমার ১২৭১! কপালটাই পুড়া। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে গতবছর কামাল স্যার ১৫টা পুরষ্কারের মধ্যে ৩টা পুরষ্কার পান৷ আগেরদিন স্যারকে বলেছিলাম যে, স্যার আপনি এবার বেশি হলে ১টা পাবেন। স্যার বললা যে পেয়ে যাবেন আরো। আমি বাজি ধরলাম যে, আপনি যদি দুটো পান তাহলে, আমি ১ম পুরষ্কার আয়রন পেলেও আপনাকে দিয়ে দিবো৷ হায়! হায়! স্যার ও পেলেন না, আমিও না। এবার কিন্তু, ২০ টা পুরষ্কার ছিলো।এদিকে প্রিন্সিপাল স্যার যতটা টিকেট কিনেছিলেন, ততটা একটা সাদা কাগজে লিখে নিয়েছেন৷ এক হাত দিয়ে বিজয়ী কুপনের নাম তুলেন আর অপর হাতে থাকা নিজের কাগজ চেক করেন৷ কিন্তু, একটাও পুরষ্কার স্যার পেলেন না।
মজার বিষয় হচ্ছে- লটারি ড্রয়ের সময় একসাথেই পাশাপাশি বসেছিলেন বশির স্যার, দেলোয়ার স্যার এবং শাহীনুর স্যার। বশির স্যার আর শাহীনুর স্যার পুরষ্কার পেয়ে গেলেন। কিন্তু দেলোয়ার স্যার পেলেন না।তখন স্যারের উক্তি, 'আমার দু'পাশের দুজন পেয়ে গেছে। আমিও পেয়ে যাবো'। সত্যিই, স্যার ৪র্থ পুরস্কার পেলেন। [বিঃদ্রঃ- পুরষ্কার গুলো ২০-১, এভাবে দেওয়া হয়েছিল ড্রয়ের মাধ্যমে।
তারপর আরো ইভেন্ট ছিলো। কিন্তু, সময়ের অভাবে আর হয়নি৷ সবাইকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয় ঘুরানোর জন্য। আমি বরাবরই ফটো তুলতে পাগল। তবে এ সফরে ফটো একেবারে কম তুলেছি,পরে সবাই যার যার মতো ফটো আর ঘুরে আবারো চলে আসি বাসে।
আসার সময় আমাদের গাড়িতে আসলেন আনোয়ার স্যার, হেলাল স্যার আর রায়হান স্যার ও সুজিত ভাই। বাস ছাড়তে দেরি, কিন্তু আমাদের গান শুরু হতে দেরি নয়। সুজিত ভাই যে নাঁচতে পারেন, আগে জানা ছিলনা। আবারো শুরু হলো নাচ আর গান। সুজিত ভাই হেলাল স্যারকে ও বসতে দিলেন না৷ শুরু হয়ে গেল নাচ। আর এদিকে আনোয়ার স্যার আর রায়হান স্যার কি করবেন বুঝতে পারতেছেন না! হঠাৎ উনারা নেমে চলে গেলেন অন্য গাড়ীতে। কেননা, আমাদের গাড়িতে বসলে গান গাইতে হবে। তার আগেই স্যাররা অন্য গাড়িতে দৌড় দিলেন। হাহাহা..হাহাহা..হাহাহা..
আবারো শুরু গান আর নাচ। পথিমধ্যে আমাদের সহপাঠি মেয়েদের গাড়িকে একটা ট্রাক ধাক্কা দেয়। ফলে অনেক সময় সেখানে দাঁড়াতে হয়। গত এপ্রিলে পরীক্ষা থেকে আসার সময়ও তাদের গাড়ি একটা হাঁস মেরে একেবারে ডিম সহ বের করে ফেলেছে। তাই, আমরাও মেয়েদের বন্ধুূদের উদ্দেশ্য মজা করে, 'কুফা' 'কুফা'- বলে চিল্লাতে শুরু করলাম।
সমস্যার সমাধান করে 'চলছে গাড়ি, যাবে এবার সোজা বাড়ি'। দুপুরে খাবার সুবিধাজনক না হওয়ায় আর অতিরিক্ত উল্লাস করায়, শেষ সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। যার কারণে পরে আর সবার সাথে ফুর্তি করতে পারিনি। এই সফর থেকে অন্যতম একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হলো- জীবনে প্রথম কখনো ভ্রমণে পথিমধ্যে বমি করি৷ এর আগে এর থেকেও লম্বা ভ্রমণ করেছিলাম।
যাইহোক, খুব ভালো একটা দিন ছিলো। আর হয়তো আসবেনা এরকম দিন। কলেজ জীবন ও শেষ প্রান্তে, একটা আশা ছিলো, শিক্ষা সফরে সকল স্যারের সাথে অন্তত একটি করে ফটো তুলবো। কিন্তু, ৪জন স্যারের সাথে ফটো তুলা হয়নি৷ আশা করছি সামনের কোনো প্রোগ্রামে সেটাও পূরণ হয়ে যাবে। হয়তো আর কখনো পাবোনা কলেজ জীবন, কলেজের শিক্ষকবৃন্দের সাথে কাটানো আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত, আর বন্ধু-বান্ধব ও জুনিয়রদের সাথে কাটানো মজার মুহূর্তগুলো। খুব, খুউব মিস করবো প্রিয় প্রতিষ্ঠান, প্রিয় বিদ্যাপীঠ ইমরান আহমদ কারিগরি কলেজ। তবুও ভালোবাসায় জড়ানো থাকবে এই প্রতিষ্ঠানের ক্লাস, মাঠ সবকিছুই। প্রিয় কলেজের উন্নতি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি সবসময়।
কলেজ থেকে স্যাররা প্রথমে ভেবেছিলেন সাদা পাথরে যাবেন। কিন্তু, আমাদের ইচ্ছে হচ্ছে মাধবকুণ্ড যাবো। স্যাররা তো আর না করতে পারেন না আমাদের ইচ্ছেটা। খরচ বেশি হবে বলে অধ্যক্ষ মহোদয় বলে দিলেন যে, অন্তত ৭০জন শিক্ষার্থী ৫০০টাকা করে দিতে হবে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে,নয়তো যাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যেই দিয়ে দিলাম ১০০জনের অধিক। যার কারণে মাধবকুণ্ড যাওয়া চুড়ান্ত । স্যার তারিখ ও ঘোষণা করলেন, ২৪ শে ফেব্রুয়ারি-২০২০ আহ! কি আনন্দ..!
২৪তারিখ যেন আসতেই চাইতেছে না। সফরে যাওয়ার আগেরদিন স্যার বললেন, সকাল ৭টা ৩০মিনিটের মধ্যেই কলেজে চলে আসতে হবে। রাত যেন কাটতে চাইতেছে না,ভোর ৫টায় ঘুম ভেঙে যায়। শুরু করি বন্ধুদের ফোন দেওয়া কিন্তু কি, একটা হারামীও কল ধরতে দেরি করে নাই। সবাই এতো ভোরে বেলায় উঠে গেছে ঘুম থেকে। কয়েক জন মেয়ে বন্ধুকে ফোন দিলাম, তারা ও দেখি সজাগ। হায়! মোটামুটি সবাই সফরে যাওয়ার জন্য আমার মতোই পাগল। কিন্তু, সেটা সামনে কেহই স্বীকার করে না। যাইহোক ভোরে গোসল সেরে চা-বিস্কিট খেয়েই রওয়ানা দিলাম। এদিকে সকাল ৭ঃ৪০ হয়ে গেছে, কিন্তু আমিনের খাওয়া আর শেষ হচ্ছে না। সে বরাবরের মতোই অলস। তারপর গৌরীনগরের সবাই মিলেই গেলাম কলেজে৷ সবাই এসে মোটামুটি উপস্থিত। স্যার তারা ও চলে আসছেন। এবার কিন্তু, নতুন বরের মতো সেজে-গুজে কোর্ট পরে যাই। মেয়ে বন্ধু থেকে শুরু করে ছেলে বন্ধুরাও সুন্দর লাগছে বলে মজা নিচ্ছিলো আমার সাথে। ক্লাসে সবাইকে ডেকে স্যার সবার গাড়ি নাম্বার নির্দিষ্ট করে দিলেন। ১ম বাসে একাদশের ছেলে, ২য় বাসে মেয়েরা আর ৩য় বাসে আমরা দ্বাদশের ছেলে, ৪র্থটাতে মেয়েরা। আমাদের আগে থেকেই দাবী বশির স্যার আর দেলোয়ার মনির স্যারকে আমাদের বাসে চাই। কামাল স্যার আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী স্যারদের আমাদের বাসে দিয়ে দিলেন।
আমরা ও খুব খুশি হলাম।কেননা দুজন স্যারই ভালো গান গাইতে পারেন আমরা ও খুব ভালো উপভোগ করতে পারবো। তারপর সবাই যার যার মতো উঠে পড়লাম বাসে। আমাদের গাড়িতে ছোট একটা স্পিকার,যেটা দেখে সবারই মন খারাপ হয়ে যায়। হঠাৎ ইমরান এসে বললো যে, ২য় বাসে বড় স্পিকার। যেটা শুনে আর বাসে বসে থাকতে পারি নাই। চুরের মতো আমি আর আরেকজন নিয়ে আসলাম ঐ স্পিকার। অবশ্যই ইমরানকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলি নাই, জোরে হলো করতালি। আর সেখান থেকেই শুরু হলো আনন্দ বাস চললো, সাথে বেড়ে চললো আমাদের উল্লাস।
তারপরেই শুরু হলো গান আর নাচ৷ আহ! যে লবীব কখনো নাচ তো দূরের কথা, গান ও গায় নাই। সেই লবীব সেদিন গান ও গেয়েছে, সাথে নাচও,ভাবতেই অবাক..! সত্যিই আমার জীবনের অন্যতম একটি আনন্দপূর্ণ দিন। একজন গান গায়, তো সবাই সুর মিলিয়ে শুরু নাচ৷ আহ! কি মজা শিক্ষা সফর। স্যাররা ও আমাদের সাথে গান গেয়েছিলেন।
বশির স্যার আর দেলোয়ার স্যার আমাদের সাথে নাচলেও শাহীনুর স্যার সিটের কোণে তে বসেই আছেন, তবে স্যার গান একটা গেয়েছেন।
এভাবে চলতেই থাকলো গাড়ি আর আমাদের আনন্দ-ফুর্তি। নুরুল হক এমন একটা মানুষ, যে কিনা একটিবার ও বসে নাই। গান শুরু হলেই শুরু তার নাচ। আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে- ভিডিওকলের মাধ্যমে ৪ বাসের সবাই এক সাথে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওকল শুরু হলে আরো বেড়ে যায় সবার নাচের ধরণ,যেন এক প্রতিযোগিতা৷ হাহাহা..হাহাহা....
তারপর ধীরে ধীরে পৌছালাম মাধবকুণ্ড লেকে। সেখানে একটু হাঁটার পর শুরু হলো দুপুরের খাবার। স্বেচ্ছাসেবকরা সবার খাবার দিয়ে নিজেরাও খেতে বসলো। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, কয়েকটা বিরিয়ানির প্যাকেট মেয়েদের গাড়িতে তারা রেখে যায়। পরে সবাইকে দেওয়ার পর খাবারের সঙ্কট পড়ে যায়। যার কারণে পাগলা বন্ধু মহাতির আর কামাল স্যার মিলে একটা ভাগ করে খেয়ে নেন। যা ছাত্র-শিক্ষকের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
যাইহোক খাবারের শেষে শুরু হয় লটারির ড্র। আমি গতবছর লটারি জিততে পারি নাই বলে এবার মাত্র ২টা কিনেছি। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি! ১২৭০ জয়ী হয়, আর আমার ১২৭১! কপালটাই পুড়া। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে গতবছর কামাল স্যার ১৫টা পুরষ্কারের মধ্যে ৩টা পুরষ্কার পান৷ আগেরদিন স্যারকে বলেছিলাম যে, স্যার আপনি এবার বেশি হলে ১টা পাবেন। স্যার বললা যে পেয়ে যাবেন আরো। আমি বাজি ধরলাম যে, আপনি যদি দুটো পান তাহলে, আমি ১ম পুরষ্কার আয়রন পেলেও আপনাকে দিয়ে দিবো৷ হায়! হায়! স্যার ও পেলেন না, আমিও না। এবার কিন্তু, ২০ টা পুরষ্কার ছিলো।এদিকে প্রিন্সিপাল স্যার যতটা টিকেট কিনেছিলেন, ততটা একটা সাদা কাগজে লিখে নিয়েছেন৷ এক হাত দিয়ে বিজয়ী কুপনের নাম তুলেন আর অপর হাতে থাকা নিজের কাগজ চেক করেন৷ কিন্তু, একটাও পুরষ্কার স্যার পেলেন না।
মজার বিষয় হচ্ছে- লটারি ড্রয়ের সময় একসাথেই পাশাপাশি বসেছিলেন বশির স্যার, দেলোয়ার স্যার এবং শাহীনুর স্যার। বশির স্যার আর শাহীনুর স্যার পুরষ্কার পেয়ে গেলেন। কিন্তু দেলোয়ার স্যার পেলেন না।তখন স্যারের উক্তি, 'আমার দু'পাশের দুজন পেয়ে গেছে। আমিও পেয়ে যাবো'। সত্যিই, স্যার ৪র্থ পুরস্কার পেলেন। [বিঃদ্রঃ- পুরষ্কার গুলো ২০-১, এভাবে দেওয়া হয়েছিল ড্রয়ের মাধ্যমে।
তারপর আরো ইভেন্ট ছিলো। কিন্তু, সময়ের অভাবে আর হয়নি৷ সবাইকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয় ঘুরানোর জন্য। আমি বরাবরই ফটো তুলতে পাগল। তবে এ সফরে ফটো একেবারে কম তুলেছি,পরে সবাই যার যার মতো ফটো আর ঘুরে আবারো চলে আসি বাসে।
আসার সময় আমাদের গাড়িতে আসলেন আনোয়ার স্যার, হেলাল স্যার আর রায়হান স্যার ও সুজিত ভাই। বাস ছাড়তে দেরি, কিন্তু আমাদের গান শুরু হতে দেরি নয়। সুজিত ভাই যে নাঁচতে পারেন, আগে জানা ছিলনা। আবারো শুরু হলো নাচ আর গান। সুজিত ভাই হেলাল স্যারকে ও বসতে দিলেন না৷ শুরু হয়ে গেল নাচ। আর এদিকে আনোয়ার স্যার আর রায়হান স্যার কি করবেন বুঝতে পারতেছেন না! হঠাৎ উনারা নেমে চলে গেলেন অন্য গাড়ীতে। কেননা, আমাদের গাড়িতে বসলে গান গাইতে হবে। তার আগেই স্যাররা অন্য গাড়িতে দৌড় দিলেন। হাহাহা..হাহাহা..হাহাহা..
আবারো শুরু গান আর নাচ। পথিমধ্যে আমাদের সহপাঠি মেয়েদের গাড়িকে একটা ট্রাক ধাক্কা দেয়। ফলে অনেক সময় সেখানে দাঁড়াতে হয়। গত এপ্রিলে পরীক্ষা থেকে আসার সময়ও তাদের গাড়ি একটা হাঁস মেরে একেবারে ডিম সহ বের করে ফেলেছে। তাই, আমরাও মেয়েদের বন্ধুূদের উদ্দেশ্য মজা করে, 'কুফা' 'কুফা'- বলে চিল্লাতে শুরু করলাম।
সমস্যার সমাধান করে 'চলছে গাড়ি, যাবে এবার সোজা বাড়ি'। দুপুরে খাবার সুবিধাজনক না হওয়ায় আর অতিরিক্ত উল্লাস করায়, শেষ সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। যার কারণে পরে আর সবার সাথে ফুর্তি করতে পারিনি। এই সফর থেকে অন্যতম একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হলো- জীবনে প্রথম কখনো ভ্রমণে পথিমধ্যে বমি করি৷ এর আগে এর থেকেও লম্বা ভ্রমণ করেছিলাম।
যাইহোক, খুব ভালো একটা দিন ছিলো। আর হয়তো আসবেনা এরকম দিন। কলেজ জীবন ও শেষ প্রান্তে, একটা আশা ছিলো, শিক্ষা সফরে সকল স্যারের সাথে অন্তত একটি করে ফটো তুলবো। কিন্তু, ৪জন স্যারের সাথে ফটো তুলা হয়নি৷ আশা করছি সামনের কোনো প্রোগ্রামে সেটাও পূরণ হয়ে যাবে। হয়তো আর কখনো পাবোনা কলেজ জীবন, কলেজের শিক্ষকবৃন্দের সাথে কাটানো আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত, আর বন্ধু-বান্ধব ও জুনিয়রদের সাথে কাটানো মজার মুহূর্তগুলো। খুব, খুউব মিস করবো প্রিয় প্রতিষ্ঠান, প্রিয় বিদ্যাপীঠ ইমরান আহমদ কারিগরি কলেজ। তবুও ভালোবাসায় জড়ানো থাকবে এই প্রতিষ্ঠানের ক্লাস, মাঠ সবকিছুই। প্রিয় কলেজের উন্নতি ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি সবসময়।
তারিখঃ- ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ইং।
No comments